by Abhibrata Bhakta | Jun 14, 2017 | বাংলা |
Reading Time: 6 minutes“দেবভূমি” – চতুর্থ পর্ব (মানা গ্রাম) কাল এসে পৌঁছেছি বদ্রীনাথ। বিকেলেই মন্দির দর্শন হয়ে গেছে। আজ সকালে আরেকবার মন্দির দেখে গাড়িতে উঠলুম, গন্তব্য ভারতের শেষ গ্রাম ‘মানা’। কলকাতায় আজ বিজয়া দশমী। এখানে তার লেশমাত্র বোঝার উপায় নেই। মন্দিরের দিকে চেয়ে দেখি, চূড়ার স্বর্ণকলসগুলো কাঁচা রোদের আলোয় ঝকঝক করছে। সকাল ১০টা বাজে, আমরা রওনা দিলাম তিন কিমি দূরে মানাগ্রামের দিকে। বদ্রীনাথ থেকে মানা যাবার রাস্তার হাল খুবই খারাপ। ধস পড়ে বিপর্যস্ত রাস্তা, কিন্তু সমানে সারাইয়ের কাজ চলছে, তবু প্রকৃতির সাথে কি আর মানুষ পারে? চার-পাঁচদিন লড়াই করে যে জায়গাটা গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে, সেটাই পাঁচ সেকেন্ডের ধস এসে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। তবু কাজ চলছেই, একমনে। এখানকার মানুষদের ধৈর্য আর পরিশ্রম দেখে অবাক হতে হয়। পেল্লাই পেল্লাই পাথরগুলোকে একটা ছোট্ট হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে টুকরো করছে। কাজ চলছে একটানা, যাতে ট্যুরিস্টদের কোনো অসুবিধে না হয়। মাঝে মাঝে পাহাড়ি ঝোড়ার জলে টায়ার ভিজিয়ে গাড়ি চলছে, কখনো খোলা কাঁচের মধ্যে দিয়ে ছুটে আসছে হিমশীতল ঝর্ণার জল। দেখতে দেখতে কখন যে পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। ঝকঝকে আবহাওয়া, পাশে পাশে চলছে নীলকণ্ঠ, নর-নারায়ণ আরো কত নাম না জানা হিমগিরি। তাদের গায়ের হিমবাহগুলো যেন শিরা-উপশিরার মত নামছে নদী হয়ে। হরিদ্বার থেকে বদ্রীনাথ হয়ে মানাগ্রাম অবধি পুরোটা একটিই জাতীয় সড়ক। কিন্তু এখানে এসে এই রাস্তার শেষ, এবার গ্রামের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি পথ ধরতে হবে। স্বাগত জানাচ্ছে একটা বোর্ড, তাতে লেখা, ভারতের শেষ গ্রাম ‘মানা’য় আপনাকে স্বাগত। গাড়ি পার্ক করে গেট পেরিয়ে ঢুকলাম মানাগ্রামে। দেখতে আর পাঁচটা গ্রামের মতোই, তাহলে এতো এতো লোক ছুটে আসে কেন? শুধু গ্রাম দেখতে? না, এই মানাগ্রাম শুধু ভারতের শেষ গ্রামই নয়, মহাভারতের মহাপ্রস্থানিক পর্বে আছে যে, এই মানা গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছে স্বর্গের পথ। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের...
by Abhibrata Bhakta | May 29, 2017 | বাংলা |
Reading Time: 4 minutes“দেবভূমি” – দ্বিতীয় পর্ব (বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে) হরিদ্বার থেকে রওনা দিয়েছি পরশু। আজ (১০ অক্টোবর, ২০১৬) সকালে নন্দপ্রয়াগ থেকে আউলি হয়ে বদ্রীনাথ যাবো। আউলির গল্প অন্য একদিন শোনাবো। যোশীমঠ থেকে শুরু করি এখন। যোশীমঠকে বদ্রীনাথের দরজা বলতে পারেন। পিক সিজনে এখান থেকে বদ্রীনাথ যাবার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে গেট সিস্টেম করা হয়। মানে, সরু রাস্তায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিকেল চারটের সময় শেষবারের মত গাড়ি ছাড়া হয়। এখান থেকে বদ্রীনাথ প্রায় ৪০ কিমি। তাই অন্তত দু থেকে আড়াই ঘন্টা তো লাগবেই পাহাড়ি রাস্তায়। আমরা মোটামুটি দুপুর একটা নাগাদ রওনা হলুম বদ্রীনারায়ণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু যোশীমঠেও একটা দেখার জায়গা আছে। সেটা হল, নরসিংহ মন্দির। শীতকালে যখন বদ্রীনাথ মন্দির বরফে ঢেকে যায়, আর মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায় ছ’মাসের জন্য, তখন এখানেই বদ্রীনারায়ণের পুজো হয়। মন্দিরে যেতে গেলে যোশীমঠ বাজারের ঠিক মুখেই একটু নেমে যেতে হবে। মূল মন্দিরটা দেখতে অনেকটা আসল বদ্রীনাথ মন্দিরের মতই, তবে পশে আরেকটা নতুন মন্দির তৈরী হচ্ছে দেখলাম। দোতলা মন্দির, নিচে নরসিংহ ও দেবী লক্ষ্মী আর ওপরে বদ্রীনাথের আসন। এই মন্দির নিয়ে একটা পৌরাণিক আখ্যান আছে, শুনে নিই সেটা- সেই কোনকালে, হিমালয়ের কোলে এই ছোট্ট রাজ্যের অধিপতি ছিলেন রাজা নন্দ ঘোষ। এই নন্দ ঘোষের নামেই পঞ্চপ্রয়াগের একটার নাম নন্দপ্রয়াগ। রাজা বিষ্ণুভক্ত, আরাধ্য দেবতা বিষ্ণুর অবতার নরসিংহ। এই মন্দিরেই বিষ্ণু পূজিত হতেন। রাজার ভক্তি সুবিদিত হলেও বিষ্ণু স্বয়ং একদিন এক অতিথির বেশে এলেন রাজাকে পরীক্ষা করতে। রাজা তখন ভবনে নেই, রানীর আতিথেয়তায় তুষ্ট হয়ে নররূপী বিষ্ণু রাজার পালঙ্কে শুয়ে নিদ্রা গেলেন। রাজা এসে দেখলেন এক অপরিচিত মানুষ তাঁর শয্যায় নিদ্রিত। ক্রোধে তখনই তিনি অতিথির গায়ে তরোয়ালের কোপ বসিয়ে দিলেন। সেই আঘাতে অতিথির হাতখানি কেটে গিয়ে কোনোরকমে শরীরের সাথে লেগে রইলো। বিষ্ণু রাজার সম্মুখ থেকে অন্তর্হিত হলেন। ক্রোধ সংহত...
by Abhibrata Bhakta | May 22, 2017 | বাংলা |
Reading Time: 6 minutes“দেবভূমি” – প্রথম পর্ব (হরিদ্বার) বেনারস থেকে ঘুরে এসেই মনটা আবার কোথাও যাই যাই করছিলো। পুজোয় ছুটিও ছিল কয়েকটা। আড়াই মাসের মাথায় তাই আবার বেরোতেই হলো। এবার ঘুরে এলাম দেবভূমি থেকে। মানে হরিদ্বার, হৃষীকেশ, কনখল আর তার সাথে বদ্রীনাথ, আউলি, মানাগ্রাম, সারি, দেওরিয়াতাল, কোটীশ্বর, দেবপ্রয়াগ, বিষ্ণুপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ, নন্দপ্রয়াগ, কার্তিকস্বামী, চোপতা ইত্যাদি। ইচ্ছে করছে সব জায়গাগুলো সম্বন্ধেই বলি। আপনারা অনেকেই হয়ত গেছেন, অনেকে যাবেন। অনেকে না গিয়েও শুনতে চাইবেন। হ্যাঁ, সব জায়গাগুলোতেই আপনাদের নিয়ে যাবো, তবে এক এক করে। আজকে কোথায় যাওয়া যায় বলুন তো? শুরু থেকেই শুরু করা ভালো, কি বলেন? এখন আমরা হাওড়া যাই চলুন। না না, রাগ করবেন না। হাওড়া থেকে ট্রেনটা ধরবো শুধু। আসলে যাবো সেই ‘হরিদ্বার’। সেদিন পঞ্চমী (৬ অক্টোবর, ২০১৬), ছুটি ছুটি মেজাজ। যারা ছুটি পাচ্ছে তাদের বেশ মজা। যারা পাচ্ছেনা তারা হাসি হাসি মুখ করে বিপক্ষকে অভিশাপ দিচ্ছে। কিছু ফ্রেঞ্চ লোকজন আবার পুজোটা কি জিনিস সেটা বোঝার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। একটা মিটিং ছিল, ঝটপট শেষ করে ‘শুভ বিজয়া ইন অ্যাডভান্স’ জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এইরকম আবহাওয়ায় কি আর অফিসে থাকা যায়? অপ্রাসঙ্গিক কথা শেষ হলো, এবার কাজের কথায় আসি। পঞ্চমীর বিকেলে লোকে নেমেছে ঠাকুর দেখতে। সাড়ে আটটায় আমাদের দুন এক্সপ্রেস, রাস্তায় জ্যাম হবে ভেবে পাঁচটায় বেরিয়েছি বাড়ি থেকে। হাওড়া স্টেশন মেরেকেটে পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগবে, কিন্তু কোথায় কি? গাড়ি তখন রিকশার চেয়েও আস্তে চলছে। হাওড়া পৌঁছলাম যখন ঘড়িতে ঠিক বাজে সাড়ে সাতটা। আর কোনো ট্রেনে টিকিট পাইনি, তাই দুনই ভরসা। রাত সাড়ে আটটায় ছেড়ে পরদিন সারাদিন-রাত শেষে ভোর পাঁচটায় যখন হরিদ্বার পৌঁছলো, তখন দূরে মনসাপাহাড়ের মাথায় টিমটিমে আলো জ্বলছে। রাস্তায় তখন লোক নেই। একটা রিকশা ধরলাম। এই প্রথম হরিদ্বারে আসা, তাই রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে চললুম। মিনিট দশেকের মধ্যেই হোটেলের সামনে। ঘর আগে...