by subhamay pal | Mar 15, 2018 | Satapantha Trek, বাংলা |
Reading Time: 5 minutesসতপন্থ তাল ট্রেক অথবা মহাপ্রস্থানের পথে!! (অন্তিম পর্ব) অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন সকালবেলা ঘুম ভেঙে দেখি চারিদিক ঝকঝক করছে। তাঁবুর থেকে বেরিয়ে দেখি ছোট জলাশয়, ঝর্ণা সব নীলে নীল। ঘাসে ঘাসে শিশির সাজ। পেছনে বালাকুন পর্বত ঝুঁকে আছে। সামনে একটি ঝর্ণা পেরিয়ে সবুজ ঘাসের আস্তরণ ক্রমে উঁচুতে উঠে গেছে, তার ওপর দিয়ে শুভ্র সমুজ্জল চৌখাম্বা ঝকঝক করছে। চক্রতীর্থের পেছন দিকে তাকাতেই দেখি মায়াময় অলকাপুরী মোহময়ী বেশ ধরে, সাদা মেঘ কালো পর্বতের গায়ে গায়ে লেগে আছে। কেন কালিদাস মেঘদূত এ এই অলকাপুরীর বর্ণনা দিয়েছিলেন বুঝতে পারছি। এই প্রাচীন ভারতের প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস মন প্রাণ ভরে আত্মস্থ করলাম, যতটুকু এই অর্বাচীনের পক্ষে সম্ভব। আজ আমাদের স্থির হয়েছে, এখান থেকে সতপন্থ গিয়ে ফিরে চক্রতীর্থেই থাকবো। সতপন্থ এ এখন তাঁবু ফেলা নিষেধ। আমরাই এর জন্য দায়ী, যত জঞ্জাল সব ওখানে ফেলে নিজেরা ভারমুক্ত হয়ে প্রকৃতিকে ভারাক্রান্ত করা আমাদের চিরকালীন স্বভাব। শুরু হলো হাঁটা…. সবুজ ঢাল বেয়ে ওপরে উঠছি, বাঁয়ে নীলকণ্ঠ, আর ডাইনে বালাকুন হাঁ করে দেখছে। এ জায়গাটা প্রায় ১৪৫০০ ফুট, তাই অল্প চড়াইতেই হাঁফ ধরছে। চোখে সানগ্লাস, চোখ খুললেই পাতা ভারী হয়ে আসে, যেন ঘুম কাটেনি এখনো। খুব আস্তে আস্তে ওই ঢালের মাথায় উঠে এলাম। উঠেই চমক; ভাবতেও পারিনি ওপরে ঐটুকু জায়গা। উঠে দাঁড়াতে গিয়েই টলে পড়ে যাচ্ছিলাম উল্টোদিকে। একটু সম্বিৎ ফিরে বসে পড়লাম। ওপরে দুপা রাখার জায়গাটুকু, উল্টোদিকে পাথর আর পাথর, একদম খাড়া নিচে নেমে গেছে। বসলাম, হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে। নামতে শুরু করলাম ধীরে ধীরে, বালি পাথর-কুচি ঝুরঝুর করছে নিচে, লাঠি দিয়ে ব্যালান্স করতে করতে নামা। তারপর আবার উঁচুনিচু পথ। ডানদিকে মোরাইন, কাদা মাটি মাখা, কোথাও পুরোনো বরফ জমে শক্ত। হঠাৎ আবার সেই গত রাত্রের আওয়াজ, নীলকণ্ঠ থেকে avalanche নামছে, যেখানে ভাঙছে বরফ সেখানে সাদা মেঘের...
by subhamay pal | Mar 14, 2018 | Satapantha Trek, বাংলা |
Reading Time: 4 minutesসতপন্থ তাল ট্রেক অথবা মহাপ্রস্থানের পথে!! তৃতীয় পর্ব মেঘদূতের দেশে ভোরবেলা ঘুম ভেঙে দেখি আকাশ অন্ধকার। লক্ষীবন থেকে আলুর পরোটা, চা খেয়ে শুরু হাঁটা। বৃষ্টি শুরু ঝিরঝিরিয়ে। জবরজং বর্ষাতি পড়ে হাঁটা মুশকিল, ছাতা নিয়েই শুরু হলো চলা।অলকানন্দার কিছু ওপর দিয়ে চলেছি। সামনেই দেখছি নদী বাঁ দিকে পাহাড়ের আড়ালে ঘুরে গেছে। সেই দিকে নদীর হিমবাহ শুরু। আমাদের যেতে হবে নীলকণ্ঠ পর্বত কে অর্ধ পরিক্রমা করে। যদিও ঘন মেঘে দেখা যাচ্ছেনা নীলকণ্ঠ। বাঁকের কাছে এসে আরেকটি হিমবাহ এসে অলকানন্দার হিমবাহে মিশেছে। ভগীরথ খড়্গ। শুনেছি এই হিমবাহ ধরে গেলে পাঁচ ছয় দিনে গোমুখ পৌঁছানো যায়। এই দুই হিমবাহের সঙ্গমে দাঁড়াই। শোভন, আমাদের গাইড ওর ডাকে চমকে তাকাই। অলকানন্দা র অপর পারে দুটি পর্বত শ্রেনির মধ্যে একটি নদী উপত্যকা। এই সেই অলকাপুরী!!! সাথে সাথেই উমপ্রসাদের বর্ণনা মনে পড়ে; এই অলকাপুরী থেকেই অলকানন্দা র উৎপত্তি। এই সেই অলকাপুরী, কবি কালিদাসের অমর অলকাপুরী! কুবেরের অক্ষয় সুখ সম্পদ সঞ্চিত এখানেই? বিরহী যক্ষের চোখের জলে ভরা অলকাপুরী।। অলকানন্দার হিমবাহের বরফ কাদা, মাটি পাথরে শক্ত, আশেপাশে বরফ গলা জলের ধারা, এগিয়ে চলি পাথর থেকে পাথরে লাফিয়ে লাফিয়ে। এগোচ্ছি, আর শুনতে পাচ্ছি প্রচন্ড বেগে পড়া জলের শব্দ। একটু এগোতেই বুঝলাম কারণ। নীলকণ্ঠ পর্বতের গা বেয়ে বহু ধারা নেমেছে। সহস্রধারা।। শুনেছি যারা অন্য সময়ে আসেন, এই ধারাগুলো শুকনো থাকে, বুঝতেই পারেননা এর মহিমা। সে কি জলরাশি, যতদুর চোখ যাচ্ছে নামছে জলের ধারা ওপর থেকে।। এখানেই নাকি ভীম জল না পেয়ে মারা গেছিলেন, আর অর্জুন সেই দুঃখে, রাগে তীর ছুঁড়ে এই সহস্রধারার সৃষ্টি করেন। সামনেই দেখছি পাঁচটা বড় জলপ্রপাত। উমপ্রসাদ অনুযায়ী এই পাঁচটি প্রপাত হলো পুরাণ বর্ণিত পঞ্চধারা তীর্থ। নামগুলি হলো প্রভাস, পুষ্কর, গয়া, নৈমিষ ও কুরুক্ষেত্র তীর্থ।। ভগবানের আদেশে পঞ্চতীর্থের দেবতারা এখানে তপস্যা করেন। ওই ধারা নদীর...
by subhamay pal | Mar 13, 2018 | Satapantha Trek, বাংলা |
Reading Time: 3 minutesসতপন্থ তাল ট্রেক অথবা মহাপ্রস্থানের পথে!! দ্বিতীয় পর্ব পথ যে আমি পেলাম সাধারণতঃ এই ট্রেক এ যারা যান, তারা গাড়িতে বদ্রি থেকে মানা গ্রাম পর্যন্ত গিয়ে হাঁটা শুরু করেন, আমরা তো উমাপ্রসাদের ‘ হিমালয়ের পথে পথে’ পড়ে উদ্বুদ্ধ ; ঠিক করলাম ওনার বর্ণিত পথেই এগোব। আজ যাবো ১১ কিমি মতো রাস্তা। সকাল ৯ টার মধ্যে মন্দির পরিক্রমা করে বদ্রিবিশাল কে প্রণাম করে রওনা হলাম। দুজন পোর্টার ও একজন কুক মালপত্রসহ পেছনে, একদম প্রথমে গাইড শোভন, মাঝে আমরা। জানি পথ চলতে চলতে এ বিন্যাস ওলটপালট হয়ে যাবে; কখন দেখবো চলতে চলতে একা একাই হেঁটে চলেছি এই সুবিশাল হিমালয়ে; নিজের এই ক্ষুদ্র নশ্বর শরীর যেন মিশে গেছে বিশালতায়। এটাই ট্রেক এর মজা ; মহত্ব ও বলতে পারেন। এ জন্যই বারবার ফিরে ফিরে আসা নতমস্তকে হিমালয়ের কোলে। যাক, আবার ফিরি হাঁটার ছন্দে- আপাতত সোজা পথ, আমাদের বাঁ দিকে স্তব্ধ নারায়ণ পর্বত, ডানদিকে নিচে তীব্র গতিতে অলকানন্দা , আর নদীর ওপারে নরপর্বত। হাঁটতে হাঁটতে কিমি তিনেক পরে ওপারে দেখা গেল মানা গ্রাম। ওই দিক দিয়ে মানা পাস হয়ে তিব্বত যাওয়ার নাকি পথ আছে। সে দিক দিয়ে তীব্রবেগে নেমে আসছে সরস্বতী নদী। মানা গ্রাম থেকে বসুধারা জলপ্রপাতের চড়াই রাস্তায় এর ওপরই আছে ভীমসেন পুল। কথিত মহাপ্রস্থানের পথে মধ্যম পান্ডব পাথর ফেলে এই পুলের সৃষ্টি করেছিল। যাই হোক, মানা গ্রামের নিচেই সরস্বতী আর অলকানন্দা র সঙ্গম, কেশব প্রয়াগ। আমাদের রাস্তা অলকানন্দার ধারা বেয়ে। চারিদিকে গমের খেত। খেত এর চারপাশে পাথরের পাঁচিল। দুই দিকে একটানা পাঁচিলের মধ্যে দিয়ে সরু পথ। কি আশ্চর্য, উমপ্রসাদ সেই কবে ঠিক এভাবেই গেছেন এ রাস্তা দিয়ে। ঠিক তাঁর বর্ণনা মতোই মনে হচ্ছে গ্রামের কোনো গলি দিয়ে চলেছি! খানিকদূর গেলেই মানা গ্রামের প্রায় উল্টোদিকে একলা নির্জন দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট...
by subhamay pal | Mar 12, 2018 | Satapantha Trek, বাংলা |
Reading Time: 2 minutesসতপন্থ তাল ট্রেক অথবা মহাপ্রস্থানের পথে!! – শুভময় পাল প্রথম পর্ব- যাত্রার পূর্বকথা শুরু হোক পথ চলা, শুরু হোক কথা বলা.. বহুবার, বারবার পড়েছি উমাপ্রসাদের লেখায় এ রাস্তার বর্ণনা। স্থানীয় রা বিশ্বাস করে যে এই রাস্তাই পান্ডবদের মহাপ্রস্থানের রাস্তা। একদম রাস্তার বাঁকে বাঁকে মিলে যায় মহাভারতে বর্ণিত জায়গা গুলো। সেই রাস্তাই এবার আমাদের গন্তব্য I ভীষণ উৎসাহে সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেললাম। জোশিমঠ এ ফোন করে গাইড শোভনের সাথে কথা বলে এক্কেবারে রেডি।একেবারে ভরা বর্ষায় যাত্রা শুরু। জুলাইএর শেষ দিক, ২০১১ এ রওনা হলাম উপাসনা এক্সপ্রেসে হরিদ্বার। সন্ধেবেলা হরিদ্বার পৌঁছেই গঙ্গা, উৎসব উপলক্ষে সেজেছে সুন্দর করে, হর কি পৌরির রাস্তায় লস্যি রাবড়ী খেয়ে মনটাকে তৈরী করে নিলাম- আমাদের এক ঢিলে বহু পাখি মারার ইচ্ছা। যে কারণে বৃষ্টির ভয় থাকা সত্ত্বেও এ সময় টা কে বেছে নেওয়া । সতপন্থ তাল ট্রেক করবো, ফেরার পথে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স আর হেমকুন্ড সাহিব । বিশাল ২টো ড্রাম এ করে টেন্ট, রান্না ও খাওয়ার জিনিসপত্র, অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আর আমরা সাত জন। এক্কেবারে জবরজং অবস্থা। যাই হোক, পরদিন সকালে গাড়ি নিয়ে পাপ্পু হাজির। বিকেলে পৌঁছলাম জোশিমঠ। আগে থেকে বুক ছিলোনা, শোভনের কৃতিত্বে জি.এম.ভি.এন. এ ডরমিটরি পেলাম। সকালে পাপ্পুর গাড়িতেই রওনা বদ্রিনাথ। রাস্তায় বহুবার বৃষ্টির কারণে ধসে আটকে আটকে বদ্রি যাওয়ার গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে সঙ্গী করে বদ্রি ঢুকলাম প্রায় বিকেলে। একটা ছোট্ট ধর্মশালায় ব্যবস্থা হলো। একটু ঘোরাঘুরি করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকাল থেকে যাত্রা শুরু যে….. ক্রমশঃ Advertisement দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে নিচের লিংকটি দেখুন সতপন্থ তাল ট্রেক অথবা মহাপ্রস্থানের পথে!! ( দ্বিতীয় পর্ব ) Advertisement...