Last Updated on
Reading Time: 4 minutesKotumsar Cave – An ancient cave in Chattisgarh
আদিম কালের চাঁদিম হিম
content written by Subhamay Pal
অন্ধকার বেশ গাঢ়, একটা হ্যাজাকের আলোয় অন্ধকার দূর দুরস্ত, বরং আরো জাঁকিয়ে বসছে। পায়ের তলায় থকথকে কাদা, জলও আছে ইতিউতি। দেয়ালগুলো দিয়ে জল চুঁইয়ে পড়ছে। নভেম্বরের শেষ, বাইরে মিষ্টি ঠান্ডা হাওয়া, মনোরম জঙ্গল আর ভেতরে অদ্ভুত গুমোট, হালকা বোটকা গন্ধ। একটা সরু শ্যাওলা মাখা পাহাড়ের দেওয়ালের খাঁজ গলে, তার গা ঘেঁষে ঢুকেছি এর ভেতরে, হুড়মুড় করে প্রায় অনেকটা নেমে এসে এই কাদা মাখা জায়গায় থিতু হয়েছি। বেশ খানিক্ষন পরে চোখ ধাতস্থ হলো, এগিয়ে চললাম গুহার ভেতরে।
১৯৯৩ নাগাদ এই চুনাপাথরের গুহাটি ও আরো দুটি গুহা আবিষ্কার হয় এই সুন্দর নির্জন, ঘন জঙ্গলাবৃত কাঙ্গার ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের ভেতর। এই অঞ্চলটা ক্ষয়জাত পর্বত ও মালভূমির অপরূপ ভূমিরূপ সমৃদ্ধ। গুহাগুলি কোলাব নদীর শাখানদী কাঙ্গার এর কাছাকাছি বিখ্যাত কাঙ্গার লাইমস্টোন বেল্টে অবস্থিত। যে গুহার ভেতর সেঁধিয়েছি তার প্রথমে নাম ছিল গোপনসার কেভ; কিন্তু পরে কুটুমসার নামে বেশি বিখ্যাত হয় কাছাকাছি একটি গ্রাম কুটুমসারের নামে।
এছাড়া কাছাকাছি একটি ছোট পাহাড়ের মাথায় আছে কৈলাশ গুফা বা কেভ। জুন থেকে অক্টোবর জলে ভরে থাকে এই গুহাগুলো, নভেম্বরেও জল থাকে অনেকসময়, কুটুমসারে ঢোকা গেলেও কৈলাশ গুফা তখনও বন্ধ। বস্তার অঞ্চল বায়োডাইভার্সিটির এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ক্ষয়জাত পর্বত, অসাধারণ সুন্দর ঝর্ণা ( তিরথগর, চিত্রকূট ), মালভূমির লালে ঘন সবুজের ছোপ। তবে এই গুহাগুলো হলো এই অঞ্চলের সবথেকে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক দ্রষ্টব্য।
এছাড়া কাছাকাছি একটি ছোট পাহাড়ের মাথায় আছে কৈলাশ গুফা বা কেভ। জুন থেকে অক্টোবর জলে ভরে থাকে এই গুহাগুলো, নভেম্বরেও জল থাকে অনেকসময়, কুটুমসারে ঢোকা গেলেও কৈলাশ গুফা তখনও বন্ধ। বস্তার অঞ্চল বায়োডাইভার্সিটির এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ক্ষয়জাত পর্বত, অসাধারণ সুন্দর ঝর্ণা ( তিরথগর, চিত্রকূট ), মালভূমির লালে ঘন সবুজের ছোপ। তবে এই গুহাগুলো হলো এই অঞ্চলের সবথেকে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক দ্রষ্টব্য।
গুহাটি ছত্তিসগড়ের বস্তার জেলার জগদলপুর থেকে ৪০ কিমি মতো দূরে, কাছেই তিরথগর ফলস। প্রধান গুহাটি প্রায় ২০০ মিটার লম্বা, এছাড়াও সমান্তরাল ও লম্বালম্বি বেশ কিছু গলি চলে গেছে বিভিন্নদিকে। ভাইজাগ থেকে কিরণডৌল প্যাসেঞ্জার এ পূর্বঘাট ভেদ করে উড়িষ্যার অসাধারণ খনিজ অঞ্চল পেরিয়ে বিকেলে জগদলপুর বা রায়পুর পর্যন্ত ট্রেনে এসে বাস বা গাড়িতে জগদলপুর। অতিথি হোটেলে রাত্রিবাস।
সকালে বেরিয়ে কাঙ্গার ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে তিরথগর ফলস ঘুরে এই গুহায়। টিকিট করে গাইডের (যিনি আসলে ফরেস্ট গার্ড) সাথে গুহার ভেতর। বাইরে থেকে পাহাড়ের ওই খাঁজ দেখেই অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ভেতরে ঢোকা। তারপর… তারপর এক অন্য জগৎ। চোখ ধাতস্থ হতেই চোখের সামনে আদিম জগৎ উন্মুক্ত হলো। মনে হচ্ছিলো কিছু গুহাচিত্রও হয়তো অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছে। হ্যাজাকের টিমটিমে আলোয় চারিদিক যেন উদ্ভাসিত। ঝলমল করে উঠলো speleothems [ গুহার বিচিত্র প্রাকৃতিক স্থাপত্য ]।
চুনাপাথরের ম্যাজিক; স্ট্যালাকটাইট আর স্টেলাগমাইট এর উদ্ভাসে কাদা, জল, অন্ধকার, গুমোট ভাব সব কোথায় হারিয়ে গেলো। জানেন নিশ্চই, স্ট্যালাকটাইট হলো গুহার ছাদ থেকে ঝুলে থাকা শিল্পকর্ম, যার মুখ ছুঁচোলো হয়, খনিজ জলের সাথে এসে জমে জমে তৈরী করে, আর স্টেলাগমাইট গুহার মেঝেতে তৈরী হয়, জলের সাথে যেসব খনিজ মাটিতে পরে, সেগুলো জমে জমে তৈরী হয়, যার ওপর দিক থ্যাবড়া বা চ্যাপ্টা।
অল্প আলো পড়তেই বিন্দু বিন্দু আলো জ্বলে উঠলো চারপাশে। একে একে চকমকিয়ে উঠলো হ্যাজাকের আলোয় গনেশের মাথা [ হাতির মাথা ] , শিবলিঙ্গ, ইন্দ্রের রাজসভা আরো কত কি ( সবই প্রচলিত কল্পনা, আপনি অন্য কিছুও কল্পনা করতে পারেন )। হলুদ স্বচ্ছ জলের ছোট ছোট ধারা, শোনা যায় বিশেষ প্রজাতির সালামান্ডার, আর একটি বিশেষ প্রজাতির ব্লাইন্ড ফিশ ( অন্ধা মছলি, স্হানীয় ভাষায়) ( Nemacheilus evezardi ) পাওয়া যায় এখানে। সে এক অন্য জগৎ, সামনে হ্যাজাকের আলোওয়ালা গাইডের ভুতুড়ে মূর্তি, আমাদের নিজেদের দীর্ঘ ছায়া পেছনে, এখন ওখান দিয়ে জল চুইয়ে চুইয়ে পরছে আর সামনে খুলে যাচ্ছে একের পর এক দৃশ্যপট; ওই সামান্য আলোয় অধিভৌতিক পরিবেশে প্রকৃতি সযত্নে তার রত্নরাজি খুলে ধরছে অনায়াসে।
** সব্বাইকে অনুরোধ, চিত্রকূট, তিরথগর দেখতে জগদলপুর গেলে অবশ্যই যাবেন কুটুমসার কেভ।
** এখন এন্ট্রি ফী ২৫ টাকা, ক্যামেরার জন্য আরো ২৫ টাকা আর ভিডিও ক্যামেরা ২০০ টাকা।
** অতিথি হোটেলের ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকার মধ্যে। যোগাযোগ করতে পারেন – 077822 25275
** আরো বেশি আধুনিক হয়ে বোরা কেভের মতো কৃত্রিম হয়ে যাওয়ার আগে প্লিজ ঘুরে আসুন।
নইলে পরে থাকবে শুধু–
….. তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম
এই অসাধারণ বর্ণনা, কল্পনা আর ছবিগুলো দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের সকলের প্রিয় ও পরিচিত দাদা শুভময় পাল দাদা। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ওনাকে।