Vetnai – The Blackbuck Nation
কোলকাতা থেকে উইকএন্ড প্ল্যান করে আপনারা ঘুরে আসতে পারেন উড়িষ্যার ভেতনইতে (Vetnai)। ছোট করে গল্পের শুরু জানতে হলে প্রায় ১০০ বছর ইতিহাসে ফেরত যেতে হবে। সেবার বর্তমানে ওডিশার গঞ্জাম জেলা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রখর খরা হল। চাষ-বাস প্রায় যায় যায় অবস্থায়, এমন সময় গ্রামের লোকেরা একপাল কৃষ্ণসার হরিণ দেখলেন যা আগে কখনও গ্রামে দেখা যায়নি। অত্যাশ্চর্য ভাবে তীব্র খরা কাটিয়ে পরদিন বৃষ্টি নামল।
তারপর থেকেই গ্রামের লোকেরা কৃষ্ণসার হরিণদের সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে প্রায় দেবদূত এর ন্যায় মর্যাদা দেওয়া শুরু করলেন। কৃষ্ণসারদের প্রতি এই মনোভাব আর ভালবাসার গ্রামটিই ভেতনই।
যাওয়ার রুট:
শুক্রবার সন্ধ্যায় অফিস করে, কলকাতা থেকে দক্ষিন ভারত গামী যে কোনও রাত্রের ট্রেন এ চেপে বসুন। চলে যান চিলকা হ্রদ এর পাশ দিয়ে, ওডিশার প্রায় শেষ প্রান্তে অবস্থিত ব্রহ্মপুর (Berhampur) অবধি। সকালে ট্রেন থেকে নেমে একটা লোকাল অটো নিয়ে পৌঁছে যান বাস স্ট্যান্ড । সেখান থেকে বাস ধরে আপনার ফাইনাল গন্তব্য আস্কা। প্রত্যেক ১০-১৫ মিনিট অন্তরে আস্কা’র বাস পাবেন। ঘন্টা খানেক এর মধ্যে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা দারুন রাস্তা অতিক্রম করে বাস পৌঁছবে আস্কা।
থাকার জায়গা:
বাস স্ট্যান্ডের পাশেই কয়েকটা থাকা ও খাবারের হোটেল রয়েছে – নিশ্চিন্তে স্পট বুকিং পেয়ে যাবেন। বলে রাখা ভাল যে হোটেল গুলি সাধারণত মধ্যমানের – কিন্তু আপনি যেহেতু প্রকৃতিপ্রেমী আর মোটে ১ রাতের ব্যাপার তাই আরামে থাকতে পারবেন। আপনাদের যদি এরসাথে মংলাজোড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তাহলে আপনারা ওখানে থাকার জন্যে Godwit Eco Cottage বা Mangalajodi Ecotourism দেখতে পারেন।
Contact of Godwit Eco Cottage :
Phone no. – 8455075534, 8455075534
E-mail – godwitecocottage@gmail.com
Contact of Mangalajodi Eco-tourism :
E-mail -mangalajodiecotourism@gmail.com
Phone: (+91) 88952-88955, 97766-96800
ঘোরার বিবরন:
হোটেল এ চেক-ইন করে ফ্রেশ হয়ে ভরপেট লাঞ্চ করে নিন। তারপর একটা অটো বুক করে চলে যান আস্কা থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত কৃষ্ণসারদের দেশ ভেতনই তে। যাওয়ার পথে অবশ্যই রাস্তার ওপর নজর রাখবেন কারন নীলকন্ঠ থেকে পাইড-কিংফিশার জাতীয় নানা রকমের পাখি ভেতনই পৌঁছানোর আগে থেকেই এক অন্য জগতের জানান দেওয়া শুরু করে দেবে।
অটো আপনাকে ভেতনই এর ওয়াচ-টাওয়ারে নামিয়ে দেবে। অটোচালক কে বিদায় জানানোর আগে তাঁর ফোন নম্বরটা নিতে ভুলবেন না কারন ২-৩ ঘন্টা কৃষ্ণসারদের পেছনে ছুটোছুটি করে ছবি তোলার পর হোটেল ফেরত যেতে অটো চালক কে ফের ডাকতে হবে।
মাঝখানের সময়টা শুধু চোখ জুড়ে কৃষ্ণসার হরিণ দেখার জন্যে বরাদ্দ। ছোট ছোট নীল টিলা দিয়ে ঘেরা প্রায় গোলাকার এক উপত্যকা যেখানে মনের আনন্দে চরে বেরাচ্ছে অগুন্তি কৃষ্ণসার হরিণ । ছেলে হরিণ চেনা যায় তাদের সিং দিয়ে যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়ে হরিণ দের ও সিং হয় (যদিও সেটা খুব কম) । আর পার্থক্য গায়ের রং-এ। জন্মানোর সময় উভয়ের-ই গায়ের রং হলদেটে হয়। বয়স বাড়ার সাথে ছেলেদের রং ঘন কালোর দিকে পরিবর্তন হয় আর মেয়েদের রং হলদেটেই থেকে যায়।
ভেতনই এর সবুজ উপত্যকার কোথাও শুধু মেয়ে হরিণ এর পাল তো কোথাও একলা চলো রে। কোথাও আবার একদল ব্যাচেলার হরিণ – যাদের গায়ের রং সবে কালোর দিকে বাঁক নেওয়া শুরু করেছে, আবার কোথাও একেবারে বাচ্চারা মায়েদের তত্ত্বাবধানে খেলে বেরাচ্ছে। কে বেশী ঝাঁপ দিতে পারে তার প্রতিযোগিতায় মেতেছে। একটু ইন্দ্রীয় সজাগ থাকলে হরিণ ছাড়াও দেখা মিলতে পারে শিয়াল, বেজি আর সাপের।
ঘন্টা ২-৩ কাটিয়ে অটো করে হোটেল এ ফেরত এসে ডিনার করে ঘুম। ওডিশার ফেমাস ছেনা-পোড়া চেখে দেখতে ভুলবেন না কিন্তু।
পরদিন সকাল সকাল বেড়িয়ে পরুন প্রকৃতি দর্শনে। চারিদিক এতই সুন্দর যে কিছু না করেও অনেক কিছু করা যায়। আগের দিন হরিণ দেখে প্রান না ভরে থাকলে, আর এক রাউন্ড ভেতনই দিব্যি চলতে পারে। আর যদি ইচ্ছে হয় ন্যাশনল বার্ড কে দেখার তো ফের অটো ভাড়া করে চলে যান পাকিডি। ঘুমসুর ফরেস্ট রেঞ্জের অন্তর্গত এই পাকিডি তে দেখা মিলবে প্রচুর ময়ূরের। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে হোটেল ফেরত আসুন । স্নান আর ভুড়িভোজ সেরে এবার একই ভাবে ফেরার পালা।
যদি ব্রহ্মপুর পৌঁছে দেখেন, ট্রেন আসতে ঘন্টা ৩-৪, তাহলে বাস বা অটো ভাড়া করে ঘুরে আসুন ১৫ কিমি দূরে গোপালপুরের সমুদ্র সৈকতে। রবিবার বিকেলের সূর্যাস্ত দেখে স্টেশন ফিরে হাওড়ার ট্রেন ধরুন।
ভেতনই উইকএন্ড ট্রিপের মোটামুটি খরচ (২ জন)
১. হাওড়া-ব্রহ্মপুর – ৩৬৫ x ২ x ২ = ১৪৬০ (সুপারফাস্ট ট্রেন এ স্লিপার ভাড়া)
২. ব্রহ্মপুর- আস্কা – ৩০ x ২ x ২ = ১২০ (বাস)
৩. ১ রাত থাকা + খাওয়া – ১৫০০ (সর্বাধিক)
৪. আস্কা-ভেতনই – ১৫০ x ২ = ৩০০
৫. আস্কা-পাকিডি ফেরত – ৩০০
৬. ব্রহ্মপুর-গোপালপুর-স্টেশন – ৩৫০ (অটো)
৭. অতিরিক্ত – ৪৭০
মোট ২ জনের – ৪৫০০
মংলাজোড়ি + ভেতনই উইকএন্ড ট্রিপের কিছু টিপ্স:
অনেকে ১টা উইকএন্ডে ভেতনই এর সাথে মংলাজোড়ি (পাখিদের স্বর্গরাজ্য বিশেষত শীতকালে) ঘোরার পরিকল্পনা খোঁজেন। তাঁদের সুবিধার্থে প্ল্যান নিচে দেওয়া হল।
১. হাওড়া থেকে শুক্রবার রাতের পুরী এক্সপ্রেস ধরে ভুবনেশ্বর যান।
২. ভোর বেলায় ভুবনেশ্বর এ নেমে স্টেশন এ অল্প ফ্রেশ হয়ে ৭.৩৫ মিনিটের ভিশাখাপত্তনম ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ধরুন ( রিসার্ভেশন এর প্রয়োজন নেই)। আপনাকে নামতে হবে কালুপরা ঘাট স্টেশনে (৮.৩০)। অনেকেই বলবে বালুগাঁও তে নামতে কিন্তু কালুপরা ঘাট এ নামলে সময় আর পকেট – দুই ই বাঁচবে।
৩. কালুপরা ঘাট থেকে অটো নিয়ে চলে যান মংলাজোড়ি (২০০-২৫০ টাকা)। পুরো দিন কাটান এখানেই ।
৪. পরদিন (রবিবার) ভোরবেলায় আর এক রাউন্ড মংলাজোড়ি তে পাখি দেখতে যান। ১০টা নাগাদ হোটেল থেকে চেক আউট করে একটা ট্যাক্সি বুক করুন ভেতনই যাবেন বলে। বুক করার সময় বলে দেবেন যে ভেতনই ঘু্রিয়ে যেন বালুগাঁও ( হ্যাঁ এবার বালুগাঁও) তে ড্রপ করে। ২২০০-২৫০০ টাকায় রাজি হয়ে যাবে। ভেতনই তে কৃষ্ণসার দেখে রাস্তায় কোনো ঢাবায় খেয়ে বেলা ৪টে নাগাদ বালুগাঁও স্টেশনে পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে ই.এম.ইউ ট্রেন ধরে খুর্দা রোড আসুন (১.৫-২ ঘন্টা)। খুর্দা রোড থেকে রাত ৯.২০ নাগাদ ফিরতি পুরী এক্সপ্রেস ধরে সোমবার ভোর ৫টায় কলকাতা।
আপাতদৃষ্টিতে এই প্ল্যান টা খুব হেকটিক মনে হলেও আসলে একদম-ই তা নয় আর রাস্তা খুব ভাল হওয়ায় ক্লান্তি আসেনা।
এই ট্রিপ টা ৪ জন হলে সবচেয়ে ইকোনমিকাল হবে কারন গাড়ি আর বোট ভাড়া ২ এর বদলে ৪ দিয়ে ভাগ যাবে সেক্ষেত্রে ।
মংলাজোড়ি + ভেতনই উইকএন্ড ট্রিপের মোটামুটি খরচ (২ জন)
১. হাওড়া-ভুবনেশ্বর – ২৯০ x ২ = ৫৮০ (সুপারফাস্ট ট্রেন এ স্লিপার ভাড়া)
২. খুর্দা রোড – হাওড়া – ২৯৫ x ২ = ৫৯০ (সুপারফাস্ট ট্রেন এ স্লিপার ভাড়া)
৩. কালুপরা ঘাট স্টেশন-মংলাজোড়ি (অটো) – ২০০
৪. মংলাজোড়ি তে ১ বার বোট + গাইড – ১০০০ (২ বছর আগে ৮৫০ ছিল, বর্তমান রেট অনুমান ভিত্তিক)
৫. ১ রাত থাকা + খাওয়া – ২০০০ (সর্বাধিক)
৬. ভেতনই ট্রিপ – ২৫০০
৭. ভুবনেশ্বর – কালুপরা ঘাট ট্রেন আর বালুগাঁও – খুর্দা রোড ট্রেন – ২০০
৮. অতিরিক্ত – ৯৩০
মোট ২ জনের – ৮০০০
This content is written by Mr. Shubham Palit. His facebook posts in our tour planner group on Camera Basics is very helpful for the beginners in photography. The photographs used in this blog is obviously clicked by the author. Mr. Shubham Palit is working as a Research Manager in IMRB-International. Photography and Travelling is his passion.
একটা নতুন জায়গার idea পাওয়া গেলো । আমার মতো আনাড়ি পর্যটক এমন বিশদ বিবরণ পেলে খুবই উপকৃত হই। অনেক ধন্যবাদ।
Darun Tour plan for weekend. Tour.
Very good information with proper direction to such beautiful tour. Thanks a lot.